বাংলাদেশের বিলিয়নিয়াররা কোথায়?
আমরা কেনো এখনো কাউকে “বাংলাদেশি বিলিয়নিয়ার” বলে ডাকতে পারি না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে — এটা নতুন কিছু না। ধীরে ধীরে মধ্যবিত্তও বড় হচ্ছে, নতুন নতুন বিজনেস উঠছে, টেক স্টার্টআপও মাথা তুলছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে — এই উন্নয়নের মাঝখানে যারা সত্যিকারের সম্পদ গড়ে তুলেছে, তারা কোথায়? আমরা এখনো কাউকে “বাংলাদেশি বিলিয়নিয়ার” হিসেবে চিনতে পারি না।
আর এই না-দেখা, না-বলা বিলিয়নিয়ার শ্রেণিটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গোপন রহস্য।
আমরা জানি, স্কয়ার, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, এসিআই — এই কোম্পানিগুলোর টার্নওভার কোটি কোটি ডলার। গুলশান-বারিধারার প্রাসাদসম বাড়িগুলো, লন্ডন/দুবাই-এর অ্যাপার্টমেন্টগুলো কারা কেনে, সেটা বোঝার জন্য রিসার্চারের দরকার পড়ে না। কিন্তু তারপরও, এদেশের কেউ বলে না: “হ্যাঁ, আমি বিলিয়নিয়ার।”
এর পেছনে একটা কারণ অবশ্যই সামাজিক — আমাদের এখানে ধনী হওয়া মানেই প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া।
কিন্তু তার থেকেও বড় কারণ হলো — এই সম্পদের একটা বড় অংশ কর ফাঁকি, রাজনৈতিক সুবিধা আর ক্ষমতার নেটওয়ার্ক দিয়ে গড়ে ওঠা।
এই মানুষগুলোর অনেকেই হয়ত নিজে ব্যবসায়িক প্রতিভা দিয়ে বড় হয়েছেন। কিন্তু ঠিক ততটাই বড় ভূমিকা রেখেছে — পার্টির ছত্রছায়া, টেন্ডারবাজি, ব্যাংক ঋণ খেলাপি করে টাকাটা বাইরে পাঠানো, বা অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে সম্পদ লুকানো।
তাদের অদৃশ্য থেকে যাওয়াটা কেবল বিনয় না — এটা দায় এড়ানোর স্ট্র্যাটেজি।
এই “সফল” বিলিয়নিয়ারদের যদি আমরা দেখে না ফেলি, চিনে না ফেলি — তাহলে এই অসুস্থ সিস্টেমটা চলতেই থাকবে।
তাদের কর ফাঁকি মানে আমাদের স্কুলে বাজেট কম, হাসপাতালে ওষুধ নেই।
তাদের বেনামি ইনভেস্টমেন্ট মানে দেশের ভিতরে ইনফ্লেশন, প্রপার্টি বাবল।
তাদের রাজনৈতিক ছাতার নিচে ব্যবসা মানে অন্য সৎ উদ্যোক্তার সুযোগ বন্ধ।
এদের আলোতে না আনলে, এক ধরনের মিথ্যা রোল মডেল তৈরি হয় — যেখানে টাকা থাকলেই ক্ষমতা, কিন্তু দায়িত্ব নেই।
কাজেই এখন দরকার, এই গোপন ধনী শ্রেণিকে এক্সপোজ করা, প্রশ্ন করা — “আপনার এত সম্পদ এলো কীভাবে?”
আর সেই সাথেই দরকার আইনগত কাঠামো যেখানে কর দেওয়া বাধ্যতামূলক, আর রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে যারা বড় হয়, তাদের জবাবদিহি করাতে হয়।
বাংলাদেশে বিলিয়নিয়ার আছে — এটা নিয়ে আর সন্দেহ নেই।
ওদের অদৃশ্য থাকা মানে আমাদের অর্থনীতির ভিতরে একটা ছিদ্র রাখা।